ঢাকায় তুরস্কের মতো ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। ক্ষতির পরিমাণ তুরস্কের চেয়ে অনেক বেশি হবে। এছাড়া সবচয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় প্রায় সমাগত। এমনটিই আশঙ্কা করছেন এ সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের চেয়ে ঢাকার জনঘনত্ব বেশি। অন্যদিকে ঢাকা শহরের উন্মুক্ত জায়গা এবং সড়কের প্রশস্ততাও অনেক কম। সঙ্গত কারণে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এখানে ক্ষতি ব্যাপক হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ঢাকায় ভূমিকম্প হওয়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে। ১০০ থেকে ১৫০ বছরের মধ্যে এই এলাকায় পাঁচটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এগুলোর মাত্রা সাত বা তার চেয়ে কিছু বেশি ছিল। সে হিসাবে এখন যে কোনো সময় এখানে ভূমিকম্প হতে পারে। তিনি আরও বলেন, তুরস্কের চেয়ে ঢাকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে। কারণ এখানে জনঘনত্ব বেশি। সড়কগুলো সরু। তবে ভবনের ক্ষয়ক্ষতি একই ধরনের হতে পারে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, তুরস্কের মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার অবকাঠামো লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। এর চেয়ে কম মাত্রার হলেও ঢাকার অবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে। তিনি আশঙ্কা করে বলেন, তুরস্কের চেয়েও তিন থেকে চারগুণ বেশি ক্ষতি হবে। কেননা, তুরস্কে পর্যাপ্ত খালি জায়গা এবং প্রশস্ত সড়ক রেখে শহর গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে যার অনুপস্থিতি রয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ঢাকায় নতুন সব বিল্ডিং হবে ভূমিকম্প সহনীয়। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে রাজউক। পাশাপাশি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ভাঙার ব্যবস্থা করা হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করা হবে।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার ৯৫ শতাংশ ভবন যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করেই নির্মিত হয়েছে। ভবনের নির্মাণ অনুমোদন ও মান যাচাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ আছে, রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ কারণে রাজধানী নিয়ে এমন উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উন্মুক্ত জায়গা না থাকা এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকায় বড় দুর্যোগে এসব ভবন ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে। কয়েক বছর আগে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ২-৩টি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের মার্চে বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর তদন্তে ভবন নির্মাণে এসব ত্রুটি বের হয়ে আসে। সে সময় ১০ তলা বা তারচেয়ে বেশি উচ্চতার এক হাজার ৮১৮টি ভবন চিহ্নিত করা হয়। সেখানে ৯৫ শতাংশ ভবনে নির্মাণ ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়।
এর পাশাপাশি ঢাকার বসিলা, ঢাকা উদ্যান, কেরানীগঞ্জ, বাড্ডা, ডেমরা, সাঁতারকুল, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ, সাভার, আশুলিয়াসহ বেশকিছু এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই মানহীন অনেক ভবন নির্মিত হয়েছে। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে নির্মিত হওয়ায় সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রাজধানী ঢাকার ভবনগুলো দুর্যোগ সহনশীল হিসাবে তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজউক। আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও কিছু জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি ভবনের ফিটনেস যাচাইয়ের লক্ষ্যে মহাখালীতে একটি ল্যাবরেটরি গড়ে তুলতে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ওই ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী-ঢাকার তিন হাজার ২০০টি ভবন পরীক্ষা করে তারা দুই হাজার ৮০০টি ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছে। এরমধ্যে ২৪০টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছে। এই জরিপের আলোকে পরামর্শ এসেছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।